রবিজীবনী

“…দেশকালকে জড়িয়ে জীবনীও এক অর্থে ইতিহাস, তার মধ্যে ভাবাবেগের স্থান নেই। একজন মানুষকে বুঝতে হলে ক্রিয়াশীলতা এবং আচরণটুকুই সব নয়। তাঁর জীবন-ব্যাপারের কার্যকারণ সূত্র স্থান কাল পরিবেশ থেকে খুঁজে বের করতে হবে। এই কাজটি রবীন্দ্রজীবনীর ক্ষেত্রে এতদিন সম্যকভাবে হয়নি। প্রশান্তবাবুই প্রথম আতুচ্ছ খুঁটিনাটি তথ্যের সঙ্গে প্রকাশ্য বৃহৎ ঘটনাবলীকে তুলনামূলক সম্বন্ধে বিধৃত করে দেখাতে চেষ্টা করলেন। ফলে প্রচলিত সিদ্ধ রসে আঘাত লাগল হয়ত কিন্তু সরল সত্যটি অনাবৃত হল। চিত্রিতব্য চরিতমূর্তিটিকে তিনি প্রামাণ্য তথ্যপুঞ্জের পটভূমিতে শিলুয়েটের মত দাঁড় করিয়ে দিলেন। তখন দেখা গেল অনেক অন্ধকারেরও ভাষা আছে। আপাত অপ্রাসঙ্গিক অসংলগ্ন ঘটনা কনিকা ও তথ্যগুলি কখনোই বোবা নয়। মূল ধাতুকে তারা কষ্টিপাথরের মত বর্ণে বর্ণে চিনিয়ে দেয়। … নানা রবীন্দ্রনাথের একখানা মালা নয়, আপাত কোলাজ ছবির মত কর্তিত আলেখ্যগুলিকে এমনভাবে ইতিহাসের শক্ত কাঠামো ও ফ্রেমের মধ্যে গুছিয়ে এনেছেন, সুশৃঙ্খলায় বেঁধে দিয়েছেন যে ফলত রবীন্দ্রজীবন হয়ে উঠেছে এক নির্দিষ্ট চিহ্নিত কালের নির্বিকল্প কাহিনী। প্রায় আকরিক খনির মত এই গ্রন্থটি ভবিষ্যৎ গবেষণার ক্ষেত্রে দুর্ম্যূল্য সম্পদ হয়ে উঠবে তাতে সন্দেহ নেই।”
~ আনন্দ বাগচী, আলোচক
[ আনন্দ পুরস্কার: ১১ মে ১৯৮৫, দেশ ]

“…ঠিক যে-সময় আমাদের ভয় হতে শুরু করেছে রবীন্দ্রচর্চার ভবিষ্যৎ নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে, ঠিক তখনই প্রশান্তকুমার পালের বিপুল এবং আকস্মিক উত্থান। রবীন্দ্রনাথের জীবনপ্রসঙ্গে অতিদীর্ঘকাল আমরা বাধ্যতই নির্ভর করেছিলাম প্রভাতকুমারের উপর, প্রাথমিক সেই সুকৃতির জন্য তাঁর কাছে আমাদের ঋণেরও কোনও শেষ নেই, কিন্তু জানার সীমানা তো বেড়েই চলে তবু। নিজের মতো করে রবীন্দ্রনাথের লেখা ধারাবাহিক অনুধাবন করতে গিয়ে প্রশান্ত তাঁর অনেক প্রশ্নের মীমাংসা পাননি প্রভাতকুমারের ইতিহাসে, আরও ব্যাপক আয়োজনে সে-ইতিহাসের শূন্য অংশগুলি ভরাট করবার দরকার আছে বলে মনে হয়েছিল তাঁর, আর পাঠক হিসেবে তাঁর সেই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজতে খুঁজতে তিনি নিজেই হয়ে উঠলেন জীবনীলেখক, প্রভাতকুমারের চার খণ্ড ‘রবীন্দ্রজীবনী’র পর আমাদের হাতে এসে পৌঁছল ‘রবিজীবনী’র মতো বিশাল এক হর্ম্য।…এ-বইয়ের যে-কোনও একটি অধ্যায়কে বলা যায় এক স্বয়ংপূর্ণ গবেষণা, …”
~ শঙ্খ ঘোষ, কবি-অধ্যাপক
[আনন্দবাজার পত্রিকা, শনিবার ১৫ এপ্রিল ১৯৯৫]

“…প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের রবীন্দ্রজীবনী বহুবার পড়েছি।…প্রশান্তবাবুর বইয়ে পাওয়া গেল অন্য রবীন্দ্রনাথকে। একেবারে বিদেশি ধারার গবেষণা। শুধু তথ্য দিয়ে জীবন-চরিত রচনা নয়, পুনর্মূল্যায়ন এবং অনুসন্ধানের চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত প্রতি খন্ডে…”
~ চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, রবীন্দ্র-গবেষক
[আনন্দবাজার পত্রিকা,শনিবার ৩ জানুয়ারি ২০০৪ ]